তেলাকুচার ঔষধি গুনাগুন জেনে নিন
তেলাকুচার ঔষধী গুনাগুন এখনো অনেকেরই অজানা। তেলাকুচা গ্রাম গঞ্জের একটি অতি পরিচিত উদ্ভিদ হলেও এর সঠিক ব্যবহার এখনো অনেকেয় জানেনা। তাই আজকে আমাদের আর্টিকেল টি সাজানো হয়েছে তেলাকুচার কিছু অসাধারণ ওষুধী গুনাগুন নিয়ে। তেলাকুচো একটি ভেসজ উদ্ভিদ। এর ঔষধি গুনাগুন অনেক। গ্রাম গঞ্জের আনাচে-কানাচে এটি জন্মে থাকে।
বর্তমানে তেলাকুচা যদি অনেক গুরুত্বপূর্ণ ওষুধ তৈরি হচ্ছে।এই নিয়ে নিচে বিস্তারিত আলোচনা থাকছে। তাই চলুন দেরি না করে দেখা যাক তেলাকুচায় যেসব ওষুধী গুনাগুন রয়েছে।
পোস্ট সূচীপত্র:তেলাকুচর ঔষধী গুনাগুন
তেলাকুচার ঔষধি গুনাগুন
তেলাকুচা কোনো সাধারণ উদ্ভিদ বা আগাছা নয়, তেলাকুচার ঔষধি গুনাগুন অনেক,যা এখনো অনেকের অজানা।পৃথিবীর প্রতিটি উদ্ভিদ ও প্রাণী সৃষ্টি হয়েছে মানুষের উপকারের জন্য। আর মানুষ নানাভাবে প্রয়োজনে কাজে লাগায় বিভিন্ন উদ্ভিদ এর ঔষধি গুনাগুনকে যেমন আসুখ সারাতে, খাদ্যের প্রয়োজনে, আসবাবপত্র তৈরিতে উদ্ভিদকে ব্যবহার করে থাকে। সৃষ্টির আদি কাল থেকেই প্রকৃত ও মানুষের মধ্যে একটি নিবিড় সম্পর্ক রয়েছে।
তেলাকুচার যে সব গুনাগুন রয়েছে। একটা মানুষকে বিভিন্ন আসুখ সারাতে সাহায্য করে। এর বিভিন্ন ভিটামিন ও পুষ্টি উপাদান মানুষকে বিভিন্ন মরণঘাতী আসুখ থেকে রক্ষা করে। তেলাকুচার ব্যবহার আগে তেমন না জানলেও মানুষ বর্তমানে বিভিন্ন বই পুস্তক পরে ও গবেষণা করে তেলাকুচার ঔষধি গুনাগুন সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পেরেছে।
তেলাকুচ উদ্ভিদ পরিচিতি
তেলাকুচা একটি লতানো গুল্ম জাতীয় উদ্ভিদ। তেলাকচার ফুল, ফল ও বীজ হয়।এর বীজ ফলের মধ্যে থাকে। তেলাকচার ফল অনেকটা পটল ও শসার মত। আকৃতি পটলের মতো হলেও এর গায়ের উপরের অংশ শসার মত। তেলাকচার গাছ বর্ষাকালে বেশি জন্মে থাকে গ্রীষ্মকাল এটি প্রাইম মৃত হয়ে যায় কিন্তু বর্ষাকালে শিকড় থেকে আপনা আপনি জন্মে থাকে। তেলাপোতা যেমন চাষাবাদ হয় না। ইদানিং এর গুনাগুনের কথা জেনে কিছু কিছু অঞ্চলের চাষাবাদ শুরু হয়েছে। বেশ করে ভারতের কেরা অঞ্চলের চাষ হচ্ছে এবং বাজারও বিক্রি হচ্ছে।
আরো পড়ুনঃ অবাক করা যত পেয়ারা পাতার পুষ্টিগুণ
Cucurbitaceae পরিবারভুক্ত তেলাকুচার বৈজ্ঞানিক নাম হচ্ছে Coccinia grandis. তেলে কুচা বহুবর্ষজীবী লতানো উদ্ভিদ।তেলাকুচা পাতা ও কান্ড সবুজ। তেলাকুচাকে একেক অঞ্চলে একেক নামে ডাকা হয়। তেলাকুচার পাতা সবজি হিসেবে খাওয়া যায়। তেলাকচার ফলও খাওয়া যায় যা বিভিন্ন রোগ নিরাময় সাহায্য করে।
তেলাকুচা পাতার যত উপকার
তেলাকুচা একটি ভেষজ উদ্ভিদ। তেলাকুচার ঔষধী গুনাগুন অনেক। এর পাতায় অনেক পুষ্টিগুণ রয়েছে যা মানুষের অনেক কঠিন ও জটিল রোগ দূর করে। । তিলকচার পাতার বড়া পটলের পাতার বরার মত অনেক পুষ্টিগুণ সম্পন্ন।তেলাকুচা পাতার রস খেলে ঠান্ডা জ্বর, কাশি, হাঁপানি, ফোলা রোগ এর মতো জটিল রোগ মুক্তো হয়। যাদের দীর্ঘ সময় বসে থাকলে বা যানবাহন চরে দূরে কোথাও গেলে হাত-পা ফুলে যায় তারা যদি নিয়মিত তেলাকুচা পাতা ও এর মূলের রস সকাল বিকাল নিয়মিত খাই তবে এসব সমস্যা দূর হয়।
তাছাড়া চুলের যত্নে তেলাকুচার পাতা অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। যাদের নিয়মিত চুল পড়ে এবং চুলের বৃদ্ধি হয় না তারা চুল যত্নে তেলাকুচা ব্যবহার করতে পারেন। চুলের গড়া মজবুত করে এই উদ্ভিদ। তেলাকুচাপ পাতার রস করে এর মধ্যে ডিম মিশ্রণ করে একটি প্যাক তৈরি করে মাথায় মেখে কিছুক্ষণ পর শ্যাম্পু করলে চুল পড়া বন্ধ হয় এবং চুল লম্বা হয়। ব্রন মেস্তাও দূর কর থাকে এই তেলাকুচা পাতার রস। তেলাকুচার পাতার রসে আছে ক্যালসিয়াম, লোহা, ভিটামিন এ ও সি।
তেলাকুচা ফলের যত উপকার
তেলাকুচা ফল ডায়াবেটিস রোগীর জন্য অনেক উপকারী।তেলেগুচার ফল গর্ভবতী মায়েদের জন্য অনেক উপকারী। যেসব বাচ্চারা দুধ খেতে পায় না অর্থাৎ যেসব প্রসূতি মায়ের বুকে দুধ হয় না সেসব প্রসূতি মায়েরা যদি নিয়মিত তেলাকচার ফল মধুতে মিস করে খায় তবে তাদের বুকে দুধ আসে। অনেক সন্তান তাদের মায়ের বুকের দুধ খেতে পায় না। সেসব মায়ের জন্য তেলাকুচার ফল অনেক উপকারী। তেলাকুচার ফল স্বাদের তিতা হওয়ায় এর সাথে কয়েক ফোটা মধু মিস করে খেলে অনেক উপকার হয়।
ফল পটলের মতো দেখতে হয় এবং এর শসার মত তেলতেলে হয়। তেলাগুটার ফল ভাজি করে খাওয়া যায়। এটা অনেক উপকার পাওয়া যায়
তেলাকুচা যেভাবে খাওয়া যায়
তেলাকচার ওষুধি গুনাগুন যেমন অনেক তেমনি তেলাকুচা বিভিন্ন উপায়ে খাওয়া যায়। যেমন তেলাকুচার পাতার বড়া করে খাওয়া যায়, তেলাকচার ফলের ভাজি করে খাওয়া যায়। তেলাকুচা পাতার রস করে খাওয়া যায়। এবং এর পাতা ও মূলের রস করে এর সাথে মধুর মিশ করে খাওয়া যায় । বিভিন্ন অঞ্চলে যেমন একে বিভিন্ন ভাবে ডাকা হয় তেমনি বিভিন্ন আঞ্চলে তেলাকুচা বিভিন্নভাবে রান্না করে খাওয়া যায়। তেলাকুচা যেভাবে খাওয়া হোক না কেন এর উপকার অনেক। আর এক একটা অসুখ সারানোর জন্য তেলাকুচা এক এক প্রক্রিয়ায় খাওয়া হয়।
সৃষ্টির শুরু থেকেই বিভিন্ন উদ্ভিদ ও গাছ-গাছারি দিয়ে কবিরাজের মাধ্যমে অশুখ সারানোর নিয়ম চলে আসছে। তাই আধুনিক যুগেও গাছগাছালির বিকল্প নাই। আমরা যে বিভিন্ন ওষুধ খাই সেগুলো তৈরি হয় থেকে এই উদ্ভিদ থেকে। সাধে তিতা হলেও তেলাকুচাতে অনেক পুষ্টিগুন রয়েছে। তেলাকুচায় রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ও মিনারেল। প্রতি 100 গ্রাম তেলাকুচায় ১.৪ মিলিগ্রাম আইরন, ০.০৮মিলিগ্রাম ভিটামিন বি২(রিবোফ্লোবিন), ০.০৭মিলিগ্রাম ভিটামিন বি১ (থায়ামিন), ১.৬ গ্রাম আঁশ এবং ৪০ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম থাকে।
তেলাকুচায় যেসব অসুখ সারে
তেলাকুচার উপকারের কথা বলে শেষ করা যাবে না। তেলাকুচা পাতার রস ও তেলাকুচার ফল খেয়ে বিভিন্ন রোগ দূর করা যায়। তেলাগুছের পাতার অনেক গুণ আলোচনা করা হলো।
- জ্বর কাশি সারাতে তেলাকুচা : আমাদের অনেকের শরীরে জ্বর জ্বর অনুভূতি হয়, আবার কখনো কারোর রাতে জ্বর হয় দিনে ভালো আবার দিনে জ্বর হয় রাতে ভালো থাকে। এরকম জ্বর হলে আপনি তেলাকুচা পাতার রস খেতে পারেন প্রতিদিন সকালে খালি পেটে। জ্বর সেরে যাবে দ্রুতই। তেলাকুচার রস মধু দিয়ে খেলে কাশিও ভালো হয়।
- বৃক্ক বা কিডনি ভালো রাখতে : কিডনি ভালো রাখতে সাহায্য করে এতে লাগছে। কিডনি আমাদের শরীরের একটি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ। কিডনি আমাদের শরীরের পদার্থ বের করতে সাহায্য করে। এটি আমাদের প্রস্রব নিয়ন্ত্রণ করে। আমরা প্রতিদিন যে খাবারগুলো খাই তাতে যে ক্যালসিয়াম থাকে সেগুলো পাথর হিসেবে জামতে পারে কিডনিতে। কিন্তু তেলাকুচায় থাকা ক্যালসিয়াম কিডনিতে পাথর জমতে দেয় না। তাই আমরা বলতে পারি তেলাকুচা কিডনির পাথর নিয়ন্ত্রণ করে।
- পরিপাকে সাহায্য করে : আমরা প্রতিদিন যে বিভিন্ন ধরনের খাবার খাই সেগুলো পরিপাক হতে পরিপাকতন্ত্রে অনেক সময় লাগে এবং পরিপাকতন্ত্রের অনেক ঝুঁকি পহাতে হয়। তেলাকুচার পাতা ও ফলে থাকে প্রচুর পরিমাণে আঁশ। যা আমাদের পরিপাকতন্ত্রকে ভালো রাখে এবং খাদ্য পরিপাকে সাহায্য করে ।
- শ্বোত রোগ বা ফোলা রোগ : অনেকেরই হাত-পা,মুখ চোখ অকারণে ফুলে যায় এ রোগকে ফোলা রোগ বলে। তেলাকুচা পাতার রস বা ফল খেলে এই রোগ সেরে যায়। অনেকেরই দীর্ঘ সময় জার্নি করলে বা গাড়িতে বা চেয়ারে বসে থাকলে হাত পা ফুলে যায়। সে ক্ষেত্রে তেলাকুচাপাতা বা এর মূলের রস গরম করে ফোলা জাগায় লাগালে ব্যথা সেরে যায় এবং ফোলা কমে যায়।
ডায়াবেটিক্স রোগের জন্য তেলাকুচা
ডায়াবেটিস রোগীর জন্য তেলুগুয়েজ একটি গুরুত্বপূর্ণ উদ্ভিদ। কারণ এটি ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে। ডাইবেট তেলাকুচায় থাকা থায়ামিন কার্বোহাইড্রেট গ্লুকোজের পরিণত হয়। এটি চর্বিও প্রোটিন নিয়ন্ত্রণ করে। তাই তেলাকুচাকে প্রাকৃতিক ইনসুলিন বলা হয়। একজন ডায়াবেটিস রোগীর প্রতিদিন তেলাকচার পাতা রস করে খাওয়া অনেক উপকার। প্রতিদিন তেলাকুচার ফল খেতে পারেন একটি করে সকালে খালি পেটে।
আরো পড়ুনঃ গাজর খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা
বর্তমান সময়ে ছোট বড় সকলেই ডায়াবেটিস রোগে ভুগে থাকেন। ডায়াবেটিসে একটি এমন রোগ যা সম্পূর্ণভাবে নির্মূল করা না গেলেও কিছু খাবার-দাবার কন্ট্রোল করার মাধ্যমে এটি নিয়ন্ত্রণ করা যায়। যেমন চিনি জাতীয় খাবার ডায়াবেটিকস রোগীর জন্য সম্পূর্ণ নিষেধ। তেমনি এমন কিছু কিছু উদ্ভিদ রয়েছে যেগুলো ডায়াবেটিসের রোগীর খাওয়া অনেক উপকারী। তেমন একটি উদ্ভিদ হচ্ছে তেলাকুচা। তেলাকুচার পাতা ও ফল ডায়াবেটিস রোগীর জন্য অনেক।
তেলাকুচার অপকারিতা
তেলাকুচার অনেক উপাকার থাকা সত্বেও এর কিছু অপকারীতা রয়েছে । তেলাকুছা পাতা ও ফল খাওয়ার আগে প্রথমে হালকা একটু খেয়ে দেখতে হবে শরীরে কোন রকম এলার্জি বের হচ্ছে কিনা। যাদের এলার্জি সমস্যা থাকবে তাদের তেলাকুচো নাক খাওয়ায় উত্তম। এতে নানা রকম চর্মরোগ হতে পারে। আর অতিরিক্ত তেলাকুচা খাওয়া মোটেও ঠিক নয়। ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী তেলাকুচা সঠিক পরিমাণে খেতে হবে। অতিরিক্ত তেলাকুজা খেলে কিডনি সমস্যা হতে পারে তাছাড়ার ডায়াবেটিসের সমস্যাও হতে পারে। তাই আমরা যা খাবো জেনে বুঝে সঠিক পরিমাণে খাব এতে আমাদের শরীর স্বাস্থ্য ভালো থাকবে।
শেষ কথা: তেলাকচার ঔষধি গুনাগুন
আমাদের আর্টিকেলের মধ্যে আমরা সব সময় পাঠকদের উপকারে আসে এরকম কিছু নিয়ে আলোচনা করি। তাই আজকে আমাদের আলোচনার বিষয় ছিল তেলাকুচার ঔষধি গুনাগুন । আপনি যদি আমাদের এই আর্টিকেলটি সম্পূর্ণ পড়ে থাকেন তবে আশা করছি আমাদের এই আর্টিকেলটি আপনার কোন কাজে আসবে। তেলাকুচার কিছু বিশেষ গুনাগুন নিয়ে আজকে আলোচনা করা হয়েছে যেগুলো মানুষের জন্য অনেক উপকারী। তেলাকুচা মানুষের অনেক জটিল রোগ দূর করে যা এখনো মানুষের অজানা। তেলাকুচা সহজলভ্য হওয়ায় মানুষ সহজে হাতার নাগালে পেয়ে থাকে। এবং সহজে এটি ব্যবহার করে অসুখ সারাতে পারেন।
অতএব আমাদের এ আর্টিকেলটি যদি আপনাদের ভালো লেগে থাকে তবে লাইক শেয়ার অবশ্যই করবেন। আর যদি কোন অভিযোগ, পরামর্শ, মতামত থেকে থাকে তবে কমেন্টে অবশ্যই জানাবেন। আপনাদের পরামর্শ মতাম পরবর্তীতে আমাদের লেখা আগ্রহ আরো বাড়াবে।
এএন আইটি কেয়ার নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url