পহেলা বৈশাখ নিয়ে কিছু কথা
এসেছে হে পহেলা বৈশাখ, বাঙালি মাতবে আজ রঙের মেলায়, সারা বাংলায় রমনা বটমূলের গাছের ছায়ায়, পহেলা বৈশাখ বাংলা নববর্ষের প্রথম দিন। আমাদের কাছে দিনটির একটি বিশেষ মাহাত্ম্য রয়েছে, যা আমাদের জাতিসত্তার সাথে মিশিয়ে রয়েছে কারণ সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ। নৃতাত্ত্বিক পরিচয় ও ধর্মীয় বিশ্বাস নির্বিশেষে জীবনের সকল স্তরের মানুষ ঐতিহ্যবাহী মহোৎসবের মধ্য দিয়ে দিনটি উদযাপন করে। এদিনের সমগ্র বাংলাদেশ উৎসবের আমেজে ডুবে থাকে। দিনটি মানুষকে নতুন আশা, আকাঙ্ক্ষা, স্বপ্নের মধ্য দিয়ে জীবনের চলার অনুপ্রেরণা যোগায়।
চৈত্র সংক্রান্তিতে শোভা যাত্রার পথে পথে তরুণ তরুণীর প্রাণের উচ্ছ্বাস জাগাতে, শোভিত হয় লাল সবুজের পতাকা আগামী দিনের স্বপ্ন ছায়ার লরাটে। প্রতিবছর দিনটি ঐতিহ্যের সাথে উদযাপিত হয়। লোকজন খুব সকালে ঘুম থেকে উঠে স্নান করে এবং বাঙালি ঐতিহ্যের পোশাক পরে। তরুণীরা লাল শাড়ি বা হলুদ শাড়ি পরে।নিজেদেরকে রঙিন চুরি ও নানান রঙ্গের ফুল দিয়ে সাজায়।যেখানে পুরুষেরা নিজেদেরকে পাজামা পাঞ্জাবীতে সাজায়।
পান্তা ইলিশের গানের ছুটে চলে বাঙালি পানির বাতাস মিশে যায় শুধু ইলিশ দামে খুব চড়া পারের শাড়ি পরিয়া মনের মতো মনে ছুটে আসে সব সকাল বেলা।কথিত আছে যে মোগল সম্রাট আকবর বাংলায় নববর্ষ প্রথম প্রচলন শুরু করেন। বাঙালির পানির ছাপ নববর্ষ লোকেরা দিনটিতে বৈশাখী উৎসব হিসেবে পালন করেন সব বৈশাখের শব্দচরণে কি যা লাজে। সঙ্গীততঙ্গ মুখর সমগ্র বাংলায় উঠে স্বপ্নীল হয়ে আমাজে। সাজাতে জীবনের নতুন পাতা দোকানে দোকানে খুলে হালখাতা।
বসন্তের শেষে বৈশাখ সেজে ওঠে বাসন্তি রঙ্গে নতুন ধানের ফুলে ফুলে বাউলের একতারার সুরে সুরে । নববর্ষের সবচেয়ে বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠানগুলোর মধ্যে সবচেয়ে আকর্ষণীয় অনুষ্ঠান হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলায়। সকালের শুরুতে নানান দিক থেকে হাজার হাজার লক্ষ রমনার বটমূলে ছায়ানট আয়োজিত সংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে অংশ নিতে মিলিত হয় । সংস্কৃতি অনুষ্ঠানের দেশের নাম করা শিল্পীরা অংশ নেয়।বন্ধুত্বের ঢঙ্গে সেজে নানা রঙ্গে বিখ্যাত গান এসো হে বৈশাখ এসো এসো.................। পরে শিল্পিরা ঐতিহ্যবাহী লোকগীতি গায় এবং নানান রঙের নিত্য পরিবেশন করে যা আমাদের প্রাণ ছুঁয়ে যায়।
সুন্দরীরা উঠতে ঝেড়ে পরাধীন, বখাটে যুবকদের শিষ করতালে, ধিনাক ধিন বলছে সবাই তালি মেরে আয় তোরা আয় প্রাণ থেকে পানান্তরে,করে সকল কে আপন।লোকজন বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আয়োজিত আনন্দমেলায় বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রায় অংশগ্রহণ করে। লোকজনের ব্যবহৃত মুখোশ ও মালা খুবই মনমুগ্ধকর, এসব আমাদের জাতীয় জীবনের সমসাময়িক উদ্বেগ বা আনন্দেকে পত্রিকায়ীত করে। এটা বিদেশি পর্যটক ও ঈদের পানের সাথে মিশে যায়।
সুরলহরি বেজে উঠে লোক থেকে লোকান্তরে বাঙালির চেতনা জেগে উঠে প্রাণ থেকে পানান্তরে আজ ভালোবাসা দাও,ভালোবাসা নাও, শত্রুকে বন্ধু করে নাও, পুরাতন জোড়া, দুঃখকে দূর করে সামনের দিকে অগ্রসর হও। দিনটিতে সারা দেশে যেন উৎসবের আমেজে ভর করে ছুটে চলে সামনে আগামী দিনের নতুন বার্তা নিয়ে অবিরাম গতিতে, বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান তাদের নিজস্ব অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে দিনটি পালন করে। এদিনে সংবাদপত্রগুলো বিশেষ ক্রোড়পত্র পত্র প্রকাশ করে তাদের বাঙালি সত্তার পরিচয় প্রকাশ করে। রেডিও এবং টেলিভিশনে বিশেষ অনুষ্ঠান পরিবেশন করে বাঙালি জাতির আবেগকে মানুষের মাঝে ছড়িয়ে দেয়। ১লা বৈশাখ উদযাপন সমগ্র জাতির জন্য এক সংস্কৃতিক ও আত্মিক বেলবন্ধন তৈরি করে যা কন্টকময় ভুবনে সংকটময় বাংলাদেশের জন্য শিক্ষনীয়।
এএন আইটি কেয়ার নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url