অবাক করা পান্তা ভাতের সব পুষ্টিগুন

পান্তা ভাতের পুষ্টিগুণ কথাটা শুনে অনেকেই অবাক হবেন। কিন্তু হ্যাঁ ঠিকই শুনেছেন,পান্তা ভাতের রয়েছে  বিভিন্ন ধরনের ভিটামিন, মিনারেল, ও ল্যাকটিক এসিড যা  আমাদের শরীরর অনেক উপকার করে। আর এ পান্তা ভাতে রয়েছে বিভিন্ন ধরনের ভিটামিন ও পুষ্টিগুণ তা নিয়েয় আজকে আমাদের এই আলোচনা। 

পান্তা-ভাতের-সব-পুষ্টিগুন

পান্তা ভাতের কথা শুনে বর্তমান প্রজন্ম অনেকেই নাক কুচকায়। কিন্তু আমাদের বাপ দাদারা এর সাথে অনেক শুপরিচিত। বিশেষ করে গ্রাম বাংলার মানুষের অস্তিত্বের সাথে জড়িয়ে রয়েছে এই পান্তা ভাত। দেখা যাক কি কি পুষ্টি রয়েছে পান্তার মধ্যে যা আমাদের শরীরে বিভিন্ন পুষ্টি উপাদান যোগায় এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। 

পোস্ট সূচিপত্র :পান্তা ভাতের সব পুষ্টিগুণ

পান্তা ভাতের সব পুষ্টিগুণ 

পান্তা ভাতে যেসব পুষ্টিগুণ রয়েছে তা এতদিন অনেকের অজানা ছিল। কিন্তু সাম্প্রতি এক গবেষণা দেখা গেছে যে সাধারণ ভাতের চেয়ে পান্তা ভাতে কয়েক গুণ বেশি ভিটামিন হয়েছে। যেগুলো আমাদের শরীরের জন্য অনেক উপকারী। সাধারণত গরিব ও নিম্নবিত্তের   খাবার হিসেবে বিবেচনা করা হতো এই পান্তা ভাত কে। কিন্তু সাম্প্রতিক গবেষণা উঠে আসা পান্তা ভাতের সব পুষ্টিগুণ বিবেচনা করে অনেকে এখন পান্তা ভাত খাচ্ছেন। তাছাড়া পহেলা বৈশাখে তো পান্তাভাত গরিব ধনী সবাই খায় উৎসব করে। 
কয়েক দশক আগে যখন ফ্রিজ কারেন্ট তেমন প্রচলন ছিল না তখন মানুষ পান্তা ভাত বেশি খেত। সাধারণত আগেকার মানুষ রাতে ভাত খেয়ে যেটি অবশিষ্ট ভাত বেশি হয় সেটি সংরক্ষণের জন্য মানুষ ভাতে পানি দিয়ে রাখত। ভাত যাতে নষ্ট না হয়ে যায়। তখন থেকে শুরু হয় পান্তা ভাতের প্রচলন। সাধারণত মানুষ ক্ষুধার জ্বালায় পড়লে পান্তা ভাত খায় তেমন টি বিবেচনা করা হয়। কারণ মানুষ পান্তা ভাত সচরাচর খেতে চাই না।  বিশেষ করে বর্তমান প্রজন্ম পিজ্জা, বার্গর আবিষ্কার যুগে।
কিন্তু বছরে একটা মাত্র দিন সেটি হচ্ছে পহেলা বৈশাখ, সেদিন বর্তমান প্রজন্ম থেকে নবিন প্রবীণ সবাই পান্তা ভাত খেতে মেতে উঠে সাথে থাকে ইলিশ ভাজা ও নানান রকম ভর্তা। সেদিন পান্তা ভাতের পুষ্টিগুণ জেনে না জেনে অনেকে পান্তা ভাত খেয়ে থাকেন। কিন্তু পান্তা ভাতের  পুষ্টিগুণ জানলে হইত হয়তো পান্তা ভাতের চাহিদা বেড়ে যাবে আরো কয়েকগুণ। পান্তা ভাত আমাদের শরীরের জন্য অনেক উপকারী। পান্তা ভাত শরীরকে শীতল করে রাখে এবং ব্রেনকে  ঠান্ডা রাখে। 

পান্তা ভাত যেভাবে বানাতে হয় 

পান্তা ভাত সঠিকভাবে প্রক্রিয়া করে বানালে এর পুষ্টির পরিমাণ কয়েক গুণ বেড়ে যায়। পান্তা ভাত বানানোর জন্য সাধারণত রাতে ভাত রান্না করে তারপর থেকে ঠান্ডা করে পানি দিতে হয়।পানি যেন পরিষ্কার হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। এমনভাবে পানি দিতে হবে যেন ভাত পানিতে ডুবে  থাকে। ভাত যদি সম্পুর্ন  পানিতে ডুবে না থাকে  তবে সেই পান্ত ভাতের পুষ্টি গুন নষ্ট হয়। 
সাধারণ ভাতের সাথে পানিয়া মিশিয়ে রাখলে এর সাথে বাতাসের কোন সংস্পর্শ আসতে পারে না। ফলে গাজন বা ফার্মেন্টেশন প্রক্রিয়া ঘটে এবং পান্তা ভাতের রূপান্তরিত হয়। এই ফার্মেন্টেশন প্রক্রিয়ায় কার্বোহাইডেট ভেঙ্গে উপকারী ভিটামিন এ পরিণত হয় এবং পান্তা ভাতের সব পুষ্টিগুন কে বাড়িয়ে তোলে। 
আগের মানুষ দিনের ভাত রাতে বা আগের দিনের ভাত পরের দিন সংরক্ষণ করে রাখার জন্য ভাতে পানি দিয়ে রাখতেন। যাতে ভাত নষ্ট না হয়ে যায় এবং পরবর্তীতে খেতে পারে। পান্তা ভাত সাধারণত ১২ ঘন্টার বেশি পানিতে রাখা উচিত নয়। এতে পান্তা ভাতের পুষ্টিগুণ নষ্ট হতে থাকে । তাই পান্তা ভাত পানিতে ভিজিয়ে রাখার ১২ ঘন্টার মধ্যে আমাদের খেতে হবে। তাহলে আমরা পান্তা ভাতের অনেক পুষ্টিগুণ পাবো। যা আদের শরীরের উপকার আসবে। 

পহেলা বৈশাখ ও পান্তা ভাত 

বাঙ্গালী র একটি  প্রাণের উৎসব হচ্ছে পহৈলা বৈশাখ। আর পহৈলা বৈশাখ এর সাথে ওতোপ্রোতো ভাবে জরিয়ে রয়েছে পান্তা ভাত। আগেকার গরীব মানুষরা যেখানা অভাব-অনটনের জন্য পান্তা ভাত খেত আর এখন কার গরীব ধনী সকলেই উৎসব পালনের এর জন্যে পান্তা ভাত খাই। গ্রীষ্মকালে আবহাওয়া প্রচুর সুখশো থাকে। কৃষকরা মাঠে কাজ করতে হাঁপিয়ে উঠে গরমের কারণে তাই তারা সকালের খাবার হিসেবে পান্তা ভাত খেয়ে থাকেন শরীর ঠান্ডা করার জন্য। মূলত সে থেকে পান্তা ভাতের প্রচলন শুরু হয়। 
শুধু আমাদের বাংলাদেশে না বিশ্বের বিভিন্ন দেশে পান্তা ভাতের প্রচলন আছে। বিশেষ করে যেসব দেশ কৃষি প্রধান দেশ এবং যেসব দেশর তাপমাত্রা বেশি সেসব দেশে পান্তা ভাতের প্রচলন আছে। থাইল্যান্ড, সিঙ্গাপুর সহ ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে যেমন পশ্চিমবঙ্গ, আসাম, উড়িষ্যা, তামিলনাড়ু, অন্ধপ্রদেশ, লখনৌ  এসব রাজ্যে পান্তা ভাতের প্রচলন আছে। পান্তা ভাতকে একেক রাষ্ট্রে একেক নামে ডাকা হয়। 

পান্তা ভাতে যেসব পুষ্টিগুণ রয়েছে 

পান্তা ভাতে যা অবিশ্বাস্য পুষ্টি রয়েছে তা এখনো অনেকেই মানতে পারেনা।তাই এখনো পান্তা ভাত নিয়ে অনেক গবেষণা চলছে। পান্তা ভাত নিয়ে প্রথম গবেষণা শুরু করেন ভারতের আসাম কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় এর কৃষি জৈব-প্রযুক্তি বিভাগের অধ্যাপক ড. মধুমিতা বড়ুয়া। তিনি প্রথম পান্তাভাতে যে এত ভিটামিন ও পুষ্টিগুণ রয়েছে তা প্রমাণ করেন। পান্তা ভাতে সব পুষ্টিগুন নিয়ে এখন আলোচনা করবো। 
  •  পান্তা ভাতে থাকে বিটা-সিটোস্টেরল,কেস্পেস্টেরোল যা শরীরকে প্রদাহ বা যন্তণা থেকে রক্ষা করে।
  • পান্তা ভাতে থাকে ল্যাকটিক এসিড ব্যাকটেরিয়া যা স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী।
  • পান্তা ভাতে থাকে ক্যালসিয়াম, আয়রন,ম্যাগনেসিয়াম,পটাশিয়াম, ফসফরাস, জিংক, এবং ভিটামিন হিসেবে রয়েছে ভিটামিন-বি৬ ও বি১২, ভিটামিন-কে ।
  • তাছারা পান্তা ভাতে থাকে  Phytic Acid ও Anti-Nutriant মানবদেহ একে ভাঙতে পারে না ।
  • পান্তা ভাতে আরো রয়েছে Isorhamnectin-7 Glucoside নামের ফ্ল্যাভোনয়েডস যা দেহকে ক্যান্সার থেকে রক্ষা করে ।
  • পান্তা ভাতের গাজন প্রক্রিয়ার ফলে এতে থাকা কার্বোহাইড্রেট ও ফ্যাটের পরিমাণ কমে যায় ফলে পরিমিত পরিমাণে পান্তা খেলে তা ওজন কমাতে সাহায্য করে। 

সাধারণ ভাত না পান্তা ভাত কোনটি বেশি উপকারী 

সাধারণ ভাত না পান্তা ভাত কোনটি খাওয়া বেশি উপকারি তা নিয়ে অনেকের মনে প্রশ্ন জাগে। সাধারণত মানুষ পান্তা ভাতের চেয়ে শুকনো বা গরম ভাত কেয়  বেশি সম্মানজনক মনে করে। কিন্তু সাম্প্রতিক গবেষণায় উঠে আসছে যে সাধারণ ভারতের চেয়ে পান্তা ভাতে অনেক বেশি পুষ্টিগুণ রয়েছে। বর্তমানে ফাস্টফুটের যুগে পান্তা ভাত কে তেমন একটা পাত্তাই দেয় না বর্তমান প্রজন্ম।কিন্তু এই সাধারণ পান্তা ভাতেই রয়েছে ব্যাপক পরিমাণে পুষ্টিগুণ যা শুনে আপনি অবাক হবেন। এটি কে একটি প্রাকৃতিক খাদ্য বলা যেতে পারে। যাতে রয়েছে বিভিন্ন ধরনের ভিটামিন ও মিনারেল। 
১০০ মিলিগ্রাম সাধারণ ভাতে যেখানে আয়রনের পরিমাণ থাকে ৩.৫ মিলিগ্রাম। আর ১২ঘন্টা পানিতে ভিজিয়ে রাখা পান্তা ভাতে আয়রনের পরিমাণ বেড়ে গিয়ে হয় ৭৩.৫ মিলিগ্রাম। ১০০ মিলিগ্রাম সাধারণ ভাতে ক্যালসিয়াম থাকে ২১ মিলিগ্রাম এবং পান্তা ভাতে থাকে ৮৫০ মিলিগ্রাম। 

পান্তা ভাতের ক্ষতিকর দিক 

বিজ্ঞানীরা এখন পর্যন্ত পান্তা ভাতের কোন ক্ষতিকর দিক আবিষ্কার করতে পারেনি। পান্তা ভাতে তেমন কোন ক্ষতিকর উপাদান নেই। তবে পান্তা ভাত সঠিক প্রক্রিয়া করে তৈরি না করলে বিভিন্ন ব্যাকটেরিয়া ছত্রাক জন্মে আমাদের শরীরে বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে। তাই পান্তা ভাতে পরিষ্কার পানি দিয়ে রাখতে হবে। পানি যেন সম্পূর্ণ ভাতের উপর থাকে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।রূপান্তর হওয়ার জন্য ১২ ঘন্টার বেশি সময় ধরে পানিতে না থাকে যদি কেউ খেয়াল রাখতে হবে। পান্তা ভাত পানি দেওয়ার ১২ ঘণ্টার মধ্যেই খেয়ে ফেলতে হবে। পান্তা ভাত ১২ঘন্টার বেশি পানিতে থাকলে সেটি অ্যালকোহলে পরিণত হতে থাকে এবং সেটি খেলে শরীর ম্যাচ ম্যাজ করে ও ঘুম আসে।
তাছাড়া পান্তা ভাতের তেমন কোন ক্ষতিকর দিক নাই। কিন্তু যাদের ঠান্ডা ও এলার্জি জনিত সমস্যা রয়েছে তাদের ক্ষেত্রে বুঝে শুনে পান্তা ভাত খেতে হবে। ডায়াবেটিস রোগীদের ক্ষেত্রে প্রতিদিন পান্তা ভাত খাওয়া উচিত না। 

ডায়াবেটিসের রোগীর জন্য পান্তা ভাত 

বর্তমান সময়ে অনেকে ডায়াবেটিস রোগে ভুগছে। আর ডায়াবেটিস রোগীদের খাবার দাবার সম্পর্কে বেশি সচেতন থাকতে হয়। ডায়াবেটিস রোগীর প্রাথমিক চিকিৎসায় হচ্ছে জেনে বুঝে খাবার খাওয়া। তাই জনসাধারণ মনে প্রশ্ন জাগে  ডায়াবেটিকস রোগীর জন্য পান্তা খাওয়া কি উপকার না ক্ষতিকর?  সেটার উত্তর আজকে আমরা দেওয়ার চেষ্টা করছি। ডায়াবেটিস রোগীর বেশি ভাত খাওয়া ঠিক না সেটা আমরা সকলেই জানি। কিন্তু ডায়াবেটিস কমানোর উপায় হিসেবে আপনি পান্তা ভাত বেছে নিতে পারেন। 
সাধারণ ভাত খেলে ডায়াবেটিস আর ব্লাড প্রেসার বাড়ি কিন্তু টাইপ টু ডায়াবেটিস কমে। পান্তা ভাত ইনসুলিন রেজিস্ট্রান্স কমায় ফলে ব্লাড সুগার কমে।ডায়াবেটিস রোগীর প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় ফারমেন্টেড যুক্ত খাদ্য রাখলে Fasting Blood glucose level কমানোর সাথে সাথে  HBAIc level এরও  উন্নতি করতে পারে।ফলে সামগ্রীক ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণের সুবিধা হয়। ব্লাড সুগার কমাতে সাহায্য করে পান্তা ভাতের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। 

শেষ কথা : পান্তা ভাতের সব পুষ্টিগুণ 

প্রিয় পাঠকগণ এতক্ষণ আমরা আলোচনা করেছি পান্তা ভাতের সব পুষ্টিগুন নিয়ে। পান্তা ভাত খেলে আমাদের শরীরে কি কি উপকার হয়। পাতা হতে কি কি ভিটামিন রয়েছে। তা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছি আমাদের এই আর্টিকেলে। আগেকার লোকের প্রতিদিনে সকালের  খাদ্য তালিকার ছিল পান্তা ভাত। মাঝখানে পান্তা ভাত মানুষ তেমন খেত না কিন্তু পান্তা ভাতের  সব পুষ্টিগুন এর কথা শুনে অনেকেই আজকাল পান্তা ভাত খাচ্ছেন নিয়মিত এমনকি বিভিন্ন হোটেলে রেস্তোরাঁ তেও পান্তা ভাত বিক্রি হচ্ছে চড়া দামে। তাই পরিশেষে বলতে চাই ফ্রিজের  ঠান্ডা ভাত গরম করে খাওয়ার চেয়ে পান্তা ভাত খাওয়া অনেক উপকারী।    
আমরা প্রতিনিয়ত চাই একজন পাঠক যেন আমাদের আর্টিকেল পড়ে উপকৃত হয়। যদি আমাদের আর্টিকেলটা পরে আপনারা উপকৃত হয়ে থাকেন তবে আমাদের সার্থকতা। আমাদের লেখার উৎসাহ বাড়াতে আপনাদের একটি লাইক , কমেন্ট ও শেয়ার একান্ত কাম্য। যারে যাতে করে পরবর্তীতে আমাদের লেখার উৎসাহ বাড়ে এবং বিভিন্ন ধরনের আর্টিকেল লিখে আপনাদের মাঝে আসতে পারি। 



এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

এএন আইটি কেয়ার নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url