কিভাবে পেটের চর্বি কমানো যায় অনেকে দুশ্চিন্তায় আসেন কারণ বর্তমান যুগের মানুষ ফিটনেস নিয়ে অনেক সচেতন। কিন্তু আধুনিক যুগে মানুষের গায়ক পরিশ্রম কমে যাওয়ায় ফিটনেস এর প্রধান সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে পেটের মেদ বা ভুড়ি। আমাদের কিছু অস্বাস্থ্যকর অভ্যাসের কারণে পেটের মেদ বা ভুড়ি বৃদ্ধি পায়।
আপনি যদি কিভাবে পেটের চর্বি কমানো যায় সেটা নিয়ে ভেবে থাকেন তাহলে আমাদের এই আর্টিকেলের সাথে থাকুন। কারণ আজকে আমারা কিভাবে অতি সহজে পেটের চর্বি কমানো যায় তার দশটি আলোচনা করব।
পেজ সূচিপত্র: কিভাবে পেটের চর্বি কমানো যায়
তাড়াহুড়া করে খাবার খাওয়া যাবেনা
কর্মব্যস্ত জীবনে আমরা অনেকেই খাবার খাওয়ার জন্য অল্প সময় বরাদ্দ করি। যা মোটেও ঠিক নয় এতে আমাদের শরীরের অনেক ক্ষতি হয়। তাড়াহুড়া করে খাবার খেলে ঠিকমতো পরিপাক করতে পারেনা। ফলের পেটে চর্বি জমতে শুরু করে। আমরা যে খাবার খাই পাকস্থলীর সেটি মস্তিষ্কে সংকেত পাঠাতে প্রায় ২০ মিনিট মতো সময় নেয়। তাই আমরা যখন তাড়াহুড়া করে খাবার খাই তখন ব্রেন সেটা বুঝতে পারে না আমরা খাবার কম খাচ্ছি না বেশি খাচ্ছি।
অতিরিক্ত খাবার বা কম খাবার খাওয়া দুটোই শরীরের জন্য ক্ষতিকর। তাই আমাদের উচিত ধীরে ধীরে খাবার খাওয়া। মনোযোগ সহকারে খাবার খেলে অতিরিক্ত ক্যালরি খেয়ে ফেলা এড়ানো সম্ভব। এতে আমাদের পেটের চর্বি কন্ট্রোলে আসবে।
নিয়মিত টাইম মেইনটেইন করে খাবার খেতে হবে
জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে আমাদের রুটিন মেনটেন করা উচিত খাওয়ার ক্ষেত্রেও তার ব্যতিক্রম না। নিয়ম মেনে খাবার খেলে শরীরে অতিরিক্ত ওজন বা চর্বিক কিছুই হয় না। অনিয়মিত কোন কিছুই ভালো না। কিভাবে পেটের চর্বি কমানো যায় সেটা নিয়ে ভাবলে আমাদের প্রতিদিন দিনের নির্দিষ্ট সময়ে খাবার খেতে হবে। দিনের কোন সময় কি খাবার খাব তারও একটি তালিকা করতে হবে। খাদ্য তালিকায় সব ধরনের ভিটামিনযুক্ত খাবার রাখতে হবে। এতে আমাদের পেটের চর্বি কন্ট্রোলে আসবে।
কোন বেলা খাবার বাদ দেওয়া যাবেনা
দিনের তিন বেলা খাবারের প্রতিবেলা খাবার খাওয়া আমাদের শরীরের জন্যগুরুত্ব অনেক। দিনের এক বেলা খাবার বাদ দেওয়া অনেকটা বোকামির পরিচয়। অনেকেই ঘুম থেকে দেরিতে উঠার জন্য সকালের খাবার না খেয়ে একবারে দুপুরের খাবার খাই। এতে সে নিজের ক্ষতি নিজেই করে। কারণ আমাদের শরীরের জন্য গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে সকালের খাবার। কারন সারারাত ঘুমানোর পর শরীরে এনার্জি ফেরানোর জন্যে সকালের খাবারের গুরুত্ব অনেক। কারণ সকালের খাবারটি সারাদিনের এনার্জি ধরে রাখে। একবেলা খাবার না খেলে অন্য বেলাতে এর অপর প্রভাব পড়ে ফলে ওই বেলাতে আমরা খাবার বেশি খেয়ে ফেলি এতে পেটের চর্বি বেড়ে যায়।
ওভার ইটিং করা যাবে না
পেটের চর্বি কমানোর জন্য প্রথমত ওভার ইটিং বন্ধ করতে হবে। একসাথে পেট ভরে উচিত না। প্রয়োজনে দিনে তিন বেলা খাবার বিপরীতে ৫ বেলা বেলা খাবার খাওয়া ভালো অল্প অল্প করে। অনেক সময় আমরা সৌজন্যতা খাতিরে খাবার নষ্ট না করে প্রয়োজনের তুলনায় অতিরিক্ত খেয়ে ফেলি যা শরীরের জন্য মোটেও ভালো না। অনেক সময় চোখের লালসায় অতিরিক্ত খাবার নিয়ে ফেলি, আবার অনেক সময় খাবারের সাদের জন্য অনেক খাবার খেয়ে ফেলি। যা পেটের চর্বি বাড়াতে সাহায্য করে। তাই আমাদের সঠিক পরিমাণ করে খাবার খেতে হবে।
খাবার খাওয়ার সময় অন্যমনস্ক হওয়া যাবে না
আমাদের অনেকেরই বদ অভ্যাস হচ্ছে টিভি দেখতে দেখতে খাবার খাওয়া বা মোবাইল দেখে খাবার খাওয়া।এর ফলে আমরা যে খাবার খাই সেটির শরীরে ঠিকমতো ডাইজেস্ট হয় না। যা পেটের চর্বি কে বাড়িয়ে দেয় বহুগুণ। তাই আমরা যদি আমাদের পেটের চর্বি নিয়ে দুশ্চিন্তায় থাকি এবং কিভাবে পেটের চর্বি কমানো যায় সেটা নিয়ে ভেবে থাকি। তাহলে আমাদের টিভিতে খেলা বা নাটক দেখে, মোবাইলে গেম খেলে, গান শুনে, কোন বিষয় নিয়ে দুশ্চিন্তা করে বা অন্যমনস্ক হয়ে খাবার খাওয়া যাবেনা। শরীরের ক্যালরি বেড়ে যায় রক্তে চর্বি জমে যায় ফলে পেটের ভুড়ি বেড়ে যায়।
ঘুমের প্রতি সচেতন হতে হবে
খুব মানুষকে মানসিক টেনশন থেকে মুক্তি দেয়। আর এই মানসিক টেনশন মানুষের শরীরে মেদ জমতে সাহায্য করে। কারণ মানসিক টেনশন থেকে কর্টিশল নামক এক ধরনের হরমোন নিঃসৃত হয় যা মানুষের শরীরের চর্বি বাড়িয়ে তোলে। তাই পেটের চর্বি কমানোর জন্য আমাদের শরীরের পর্যাপ্ত পরিমাণ ঘুমের প্রয়োজন। অতিরিক্ত রাত জাগার ফলে গ্রেলিন নামক এক ধরনের হরমোন নিঃসৃত হয় যা আমাদের খুদা কে বাড়িয়ে দেয়। যা আমাদের শরীরে মেদ জমতে সাহায্য করে।
সাদা চাল সাদা আটা পরিহার করতে হবে
কিছু খাবারের ভুলের জন্য আমাদের পেটের চর্বি বাড়তে থাকে। যেমন সাদা চাল বা সাদামাটা খাদ্য তালিকায় রাখা। সাদা চাল ছাঁটাই করার সময় ফাইবার ও আজ বের করে নেই যা রক্তের অতিরিক্ত চর্বি জমতে সাহায্য করে। সাদা চাল বা সাদাটা তেমন পুষ্টি গুণ নাই। এগুলো খাও আমাদের শরীরের পক্ষে ক্ষতিকর এগুলো তাড়াতাড়ি হজম হয় বলে আমাদের ক্ষুধা লাগে বেশি।আর অতিরিক্ত খাবার খাওয়ার ফলে আমাদের শরীরে ক্যালরি জমে বেশি । যা আমাদের পেটের চর্বিকে বাড়িয়ে দেই। এইজন্য আমাদের উচিত লাল চাল বাহ লাল আটা খাওয়া। যা আমাদের শরীরের ক্যালরি পরিমাণ ঠিক রাখায়।
নিয়মিত ব্যায়াম করতে হবে
প্রতিদিন নিয়মিত হাঁটাহাঁটি করলে আমাদের শরীরের কালারির পরিমাণ ঠিক থাকে এবং আমাদের শরীরে অতিরিক্ত মেদ জমতে দেয় না। ব্যায়াম মানুষের শরীরকে ফিট রাখতে সাহায্য করে। তাই কিভাবে পেটের চর্বি কমানো যায় তার একটি উপযুক্ত মাধ্যম হচ্ছে ব্যায়াম করা। আমাদের প্রতিদিন আধাঘন্টা হাটাহাটি করতে হবে এবং যোগ ব্যায়াম করতে হবে। তাহলে পেটের অতিরিক্ত চর্বি কমানো যাবে ।
জাঙ্ক ফুড বা ফাস্টফুড খাওয়া যাবেনা
পেটের চর্বি কমাতে হলে আমাদের প্রথমে খাদ্য সম্পর্কে সচেতন হবে। জাঙ্ক ফুড ফাস্ট ফুড এ ধরনের খাবার খাওয়া যাবেনা। অতিরিক্ত তেলের, চর্বিযুক্ত খাবার খাওয়া যাবে না। নিয়মিত খাওয়ার তালিকায় শাকসবজি রাখতে হবে। পিজ্জা, বার্গার, চাইনিজ এ জাতীয় খাবার পরিহার করতে হবে। চিনি যুক্ত খাবার পরিহার করতে হবে।
পেটের চর্বি কমাতে যেসব খাবার খাওয়া উচিত
পেটের চর্বি কমানোর জন্য আমাদের ডাইট মেন্টেন করে খাবার খেতে হবে। যেসব খাবারগুলো পেটের চর্বি কমাতে সাহায্য করে সে গুলো হলো
- সকালে খালি পেটে লেবু যুক্ত গরম জল খেতে হবে
- গ্রিন টি খাওয়া যেতে পারে
- সামুদ্রিক মাছ খেতে হবে
- অতিরিক্ত ঝাল জাতীয় খাবার যেমন আদা, গোলমরিচ এগুলো খেতে হবে
- ফাইবার ও আশ জাতীয় খাবার খেতে হবে
শেষ কথাঃ কিভাবে পেটের চর্বি কমানো যায়
কিভাবে পেটের চর্বি কমানো যায় তার একটি মোটামুটি ধারণা উপরে আলোচনা করে আসলাম। প্রথমে আমাদেরকে সুস্থভাবে বাঁচার জন্য মানসম্মত খাবার খেতে হবে এবং দৈনন্দিন জীবন যাপনের ক্ষেত্রে কিছু ডিসিপ্লিন পালন করতে হবে। অতিরিক্ত খাবার এবং বাসি খাবার উচিত না।
পরিশেষে বলতে চাই আমাদের পেটের চর্বি কমানোর জন্য অতিরিক্ত তেল, চর্বিযুক্ত খাবার জ্যাকপট, ফাস্টফুড জাতীয় খাবার খাওয়া ঠিক সব সময়ের ভিটামিন যুক্ত খাবার খেতে হবে।
এএন আইটি কেয়ার নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url