OrdinaryITPostAd

ঘরোয়া পদ্ধতিতে গরু মোটাতাজাকরণ প্রক্রিয়া

ঘরোয়া পদ্ধতিতে গরু মোটাতাজাকরণ প্রক্রিয়া :

 বাংলাদেশ যেহেতু কৃষি প্রধান দেশ। তাই গ্রামীণ জীবনে প্রায় প্রতিটা বাড়তি গৃহপালিত পালিত পশু হিসেবে গরু ছাগল পালন করে থাকেন তাই আজকে আমরা আলোচনা করব কিভাবে মোটাতাজাকরণ করা যায় । কিন্তু কিন্তু অনেকেই গরু পালন করলেও সঠিক নিয়ম না জানার কারণে তেমন আহ্বান হতে পারে না।আপনি যদি কম খরচে অল্প সময়ে গরু মোটাতাজীকরণ করে অধিক লাভবান হতে চান তবে আজকের ব্লকটি আপনার জন্য।  




তো গরু মোটাতাজাকরণ করার জন্য আপনাকে প্রথম থেকে কিছু নিয়ম ফলো করতে হবে যেমন, 

 পোস্ট সূচীপত্র 

  

সঠিক গরু নির্বাচন:

 সাধারণত ২ থেকে ৫ বছর বয়সের গরু মোটাতাজাকরণে জন্য নির্বাচন করলে ভালো হয়। গরুর গায়ের রং দেখে গরু কেনা ভালো। কারণ গরুর রং যদি ভালো হয় তবে আপনি যখন গুরু টি বিক্রি করবেন তখন ক্রেতাদের চাহিদা থাকবে এবং দাম ভালো পাবেন। গরুর চামড়া যাতে ঢিলা হয় সে দিকে খেয়াল রাখতে হবে। গরুর পেছনের সাইড চওড়া হতে হবে। গরু লম্বা কিন্তু পা ছোট এমন গরু নির্বাচন করতে হবে। রোগাক্রান্ত দুর্বল গরু কেনা যাবে না। কিন্তু খাদ্য অভাবে যে সব গরু দুর্বল সে সব গরু ক্রয় করতে হবে। যাতে করে অল্প সময়ে গরু মোটাতাজাকরণ পদ্ধতি ব্যবহার করে গরুটি মোটা করা যায়।

 সঠিকভাবে গরু রাখার বাসস্থান নির্মাণ করতে হবে:


 আগে গরুর ঘর তৈরি  করে তারপর গরু কিনতে হবে। গরুর ঘরে যেন পর্যাপ্ত আলো বাতাস চলাফেরা করতে পারে সেরকম জায়গায় গরুর ঘর নির্মাণ করতে হবে। গরুর ঘরের আশপাশ পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে।


 গরুর ঘরের যেন কারেন্টের ব্যবস্থা করা যায় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।দেশি গরুর জন্য তেমন কারেন্টর না দরকার হলেও যেগুলো বিদেশি গরু, যেমন অস্ট্রেলিয়া , জার্সি এগুলোর জন্য আলো ও পর্যন্ত বাতাসের ব্যবস্থা  থাকা দরকার গরুর ঘরে  টিনের বা খরের চালের ব্যবস্থা করতে হবে যাতে পানি না ঢুকতে পারে।গরুর গোয়াল ঘর নিয়মিত পরিষ্কার করতে হবে । তাতে  গরুর অসুখবিসুখ কম হয়। 

 গরুর খাদ্য তালিকায় যা যা রাখতে হবে: 


গরু পালনের প্রধান যে বিষয়টি সেটি হচ্ছে গরুর খাদ্য। গরু পালনে বাজেটের পায়ে ৬০% ব্যয় হয় গরুর এই খাদ্য যোগান দিতে, পুষ্টিকর খাদ্য দিলে সহজেই লাভবান হওয়া যায় গরু পালনে। তাই গরুকে যেসব নিয়মিত খাদ্য প্রতিদিন দিতে হবে সেগুলো হল:

 খর 

প্রতিদিন একটি গরুকে তার ওজনের উপর ভিত্তি করে তাকে খর খাওয়াতে হবে। গ্রামীণ জীবনে প্রায় প্রতিটি বাড়িতেই খর পাওয়া যায় । ধান কেটে নেওয়ার পর যে অবশিষ্ট অংশ থাকে তাকেই খর বলে । আর এটি হচ্ছে গ্রামীণ জীবনে পশুপালন করার প্রধান উপকরণ। কারণ বেশিরভাগ  মানুষ টাকার অভাবে দানাদার খাদ্য কিনতে না পেরে গরুকে খড় ঘাস খাইয়ে পালন করে থাকে ।

 সবুজ ঘাস 

 গরুর জন্য প্রধান প্রাকৃতিক পুষ্টিকর খাবার হচ্ছে সবুজ ঘাস খাওয়া প্রতিদিন গরুকে ২ থেকে ৩ কেজি করে সবুজ ঘাস খাওয়াতে হবে। এতে গরুর শরীর ভালো থাকে গরু মোটাতাজা হয় এবং গরু দুধ দেয় বেশি গরুর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে। সবুজ ঘাসের অনেক গুন রয়েছে আর গ্রামীণ জীবনে আমরা সহজেই সবুজ গাছের ব্যবস্থা করতে পারি ।  তাছাড়া বর্তমানে ও খাদ্যের জন্য অনেক রকম ঘাসের চাষ করা হচ্ছে তার মধ্যে হচ্ছে নেপিয়ার, প্যারা, গিনি ,জার্মান ও ভুট্টা ইত্যাদি। যা গরুর পুষ্টি চাহিদা মেটায় ।

  তরকারির খোসা 

 আমরা প্রতিদিন তরি তরকারি বা সবজি কেটে এর খোসাগুলো ফেলে দেই কিন্তু এগুলো ফেলা ঠিক নয় এগুলো গো খাদ্য হিসেবে ব্যবহার করা যায় এই তৈরি তরকারির  খোসায় অনেক গুণ রয়েছে। যা গরুর পুষ্টির চাহিদা মেটাতে পারে। কারণ বিভিন্ন কাঁচ সবজিতে বিভিন্ন রকম ভিটামিন রয়েছে যা গরু অতি সহজেই পেয়ে থাকে এই খোসার মাধ্যমে। 

চালের খুদি: 

গো-খাদ্য হিসেবে চালের খুদ অন্যতম ।চাল ধারার পর এর অবশিষ্ট যে অংশ থাকে তাকে চালের ক্ষুধা বলে। তাছাড়া বাজারেও চালের খুদি  কিনতে পারা যায়। এই চালের খুদি হাফ সিদ্ধ করে গরুকে দিলে গরুর অ ভিটামিন পাওয়া যায়

 সুষম খাদ্য

 গরুর প্রধান পুষ্টিগুণ হচ্ছে এর সুষম খাদ্য। গরুকে নিয়মিত গম-ভাঙ্গা, ভুট্টা ভাঙ্গা , চালের গুড়া এগুলো মিশ্রণ তৈরি করে সুষম খাদ্য তৈরি করা হয় যা গরুর গুণগতমান ঠিক রাখে গরুর পুষ্টি চাহিদা মেটাই এবং গরুর মাংস বৃদ্ধি করে এবং গাভী গরুর দুধ বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। গরুর প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় নিয়মিত সুষম খাদ্য দিতে হবে ।

মিশ্র খাদ্য 

গরুর পুষ্টির বাড়ানোর জন্য বাড়িতে অতি সহজেই মিশ্র খাদ্য তৈরি করতে পারি ।এর মধ্যে লাগবে ইউরিয়া, মোলালস ও স্ট্র। মিশ্র খাদ্যটিতে লাগবে ৩% ইউরিয়া , মোলালস লাগবে ১৫%,স্ট্র দিতে হবে ৮২% এর সাথে সামান্য পরিমাণ পানি মিশিয়ে গরুকে দিতে হবে।কিন্তু মনে রাখবেন ইউরিয়া গর্ভবতী গাভীকে দেওয়া কখনোই উচিত হবে না এতে বাছুরের ক্ষতি হতে  পারে

গরুর পালনের সঠিক চিকিৎসা পদ্ধতি নিতে হবে:

 গরুর সঠিকভাবে যত্ন নিতে না পারলে বিভিন্ন রোগ দ্বারা আক্রান্ত হতে পারে। এখন আবার চলুন জেনে নেই কিভাবে গরুর যত্ন নিতে হবে এবং চিকিৎসা করতে হবে । 
  •  গরুকে নিয়মিত স্যাভলন দিয়ে গোসল করাতে হবে।   গরুকে নিয়মিত টিকা দিতে হবে।
  •  গরুকে নিয়মিত কৃমিনাশক ওষুধ এবং ভিটামিন ফাইল খাওয়াতে হবে। 
  •  ষাঁড় গরু ও গাভি গরুর জন্য আলাদা আলাদা যত্নের   ব্যবস্থা করতে হবে।
  •  গরুকে পর্যাপ্ত আলো-বাতাস যুক্ত জায়গায় রাখতে   হবে।এতে গরুর অসুখ বিসুখ কম হয়।
  •  গরুকে ভেজা স্যাঁতস্যাঁতে জাগায় রাখা যাবে না। এতে  পায়ে খোরা রোগ হতে পারে।
  •  গরুর কোন অংশ কেটে গেলে তা নিয়মিত সেভলন   দিয়ে ধুতে হবে এবং বিভিন্ন ওষুধ লাগাতে হবে । প্রয়োজনে ডাক্তার ডাকতে হবে।
  •  কোন কাটা বা ক্ষতস্থানে যেন মশা মাছি না বসতে পারে সেজন্য একটি সাদা কাপড় দিয়ে ঢেকে রাখতে হবে। 

 গরু মোটাতাজাকরণের সুবিধা 


 গরু মোটাতাজাকরণের অনেক সুবিধা রয়েছে ,যেমন: এতে অল্প খরচে বেশি লাভবান হওয়া যায় ।সময় কম লাগে। দুধ ও মাংসের চাহিদা মেটানো যায় ।বেকার মুক্ত দেশ করা যায় ।বিভিন্ন উদ্যোগী হয়ে অন্যের কর্মসংস্থান ব্যবস্থা করা যায় পরিবারের সুখ শান্তি বজায় রাখা যায়। আর্থিকভাবে সচ্ছলতা লাভ করা যায়।

  গরু মোটাতাজাকরণের অসুবিধা 

 অনেকে দেখা গেছে গরু মোটাতাজাকরণ এর সঠিক নিয়ম না মেনে বিভিন্ন ওষুধ দিয়ে  গরু মোটাতাজাকরণ করতে গিয়ে গরুর ক্ষতি করেছে এবং আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত  হচ্ছে এবং মানুষের গুণগত মান নষ্ট করছে। সঠিক নিয়ম মেনে গরু মোটাতাজাকরণ না করলে গরুর মাংসের বিভিন্ন ধরনের ভাইরাস সৃষ্টি হতে পারে যা মানুষের মাঝে ক্ষতিকর রোগ সৃষ্টি করছে।অতিরিক্ত কোন কিছু ভালো না এতে গরুর শরীরের বিরূপ প্রভাব পড়ে। গর্ভবতী গরুর জন্য যেমন ইউরিয়া খাওয়ানো ঠিক না। 

  
গরু সঠিক সময়ে বাজারজাত করতে হবে :

 আমাদের দেশে যেহেতু মুসলিম জনসংখ্যা বেশি।তাই ঈদুল আযহা উপলক্ষে গরুর দাম বেশি থাকে। সেই সময়কে টার্গেট করে গরু মোটাতাজাকরণ করতে হবে এবং কোরবানির হাটে গরু বেচার জন্য প্রস্তুত করতে হবে ,তাহলে গরুর  উপযুক্ত দাম পাওয়া যাবে এবং লাভবান হওয়া যাবে। যখন গরুর দাম কম থাকবে সেই সময় গরু কিনতে হবে এবং যে সময় দাম বেশি থাকবে সেই সময় গরু বিক্রয় করতে হবে তাহলে লাভবান হওয়া যাবে ।গরু বাজারে নিয়ে যাওয়ার জন্য সতর্কভাবে বাজারে নিয়ে যেতে হবে। যাতে গরুর কোন খাম খোটা না হয়। গরুর শরীরে কোন ক্ষত দেখা দিলে দাম কমে যেতে পারে তাই গরুকে সতর্কতার সহিত বাজারে তুলতে হবে। 
  

পরিশেষে 

তাই পরিশেষে বলতে পারি
 গরম মোটাতাজাকরণ করে নিজের স্বাবলম্বী হন এবং অন্যকে স্বাবলম্বী হতে সাহায্য করুন এবং পরিবারের সুখ শান্তি বজায় রাখুন। কারণ বেশি ইনকাম হলে সুখ শান্তি পাওয়া যায় বেশি। জীবন স্বাচ্ছন্দ্যে কাটানো যায়। আর সুখী সুন্দর জীবন যাপন করার জন্য টাকার প্রয়োজন হয় ।তাই পরিশ্রম করে হালাল পায়ে টাকা ইনকাম করুন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

এএন আইটি কেয়ার নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url